নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে এক ঘণ্টার ব্যবধানে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের দুই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাতে শের -ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউতে) ওই দুই রোগীর মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া একজনের (৩০) বাড়ি পটুয়াখালী কলাপাড়া উপজেলায়। অপরজন (৪০) বরিশাল নগরের বাসিন্দা। হাসপাতালের পরিচালক মো. বাকির হোসেন দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে, শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের চিকিৎসক-নার্সসহ ১১ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় ওই বিভাগ লকডাউন করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ৩০ বছর বয়সী ওই যুবক গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬ টার দিকে শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন। রাত ১০ টা ১০ মিনিটের দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি (৪০) বরিশাল নগরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিনি ৪ জুন দুপুরে করোনা রোগের মতো উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন। এরপর শনিবার দুপুরে তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাঁকে আইসিইউতে পাঠানো হয়। সেখানে শনিবার রাত ১১ টা ১০ মিনিটের দিকে তিনি মারা যান।
হাসপাতালের পরিচালক বাকির হোসেন বলেন, মারা যাওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষায় আগেই করোনা নেগেটিভ এসেছিল। তবে প্রথম ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। দুজনকেই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী দাফন করা হবে। এর আগে গত শুক্রবার সকালে সাড়ে তিন ঘণ্টার ব্যবধানে দুজন মারা যান। এর মধ্যে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার করোনা পজিটিভ এক ব্যক্তি (৪৫) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) এবং বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ৫৫ বছর বয়সী অপরজন জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে করোনা ওয়ার্ডে মারা যান। এ নিয়ে বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিভাগে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৮। স্বাস্থ্য বিভাগ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ২৮ মার্চ থেকে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে কোভিড-১৯ এর উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া ৪৯ জন রোগীর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৩৭ জনই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের চিকিৎসক-নার্সসহ ১১ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগ লকডাউন (অবরুদ্ধ) করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই বিভাগের দায়িত্বরত অন্য চিকিৎসক-নার্সদের আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। করোনা পজিটিভ দুজন তথ্য গোপন করে ওই বিভাগে ভর্তি হওয়ায় তাঁদের সংস্পর্শে আসায় কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স করোনা পজিটিভ হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শনিবার এই সিদ্ধান্ত নেয়।
হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের সার্জন সুদীপ হালদার বলেন, সম্প্রতি করোনা পজিটিভ দুই ব্যক্তি তথ্য গোপন করে অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি হন। তাঁরা কয়েক দিন ওই বিভাগে চিকিৎসা নেন। বিষয়টি জানতে পেরে অর্থোপেডিক বিভাগের সব চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে মেডিকেল কলেজের করোনা পরীক্ষাগারে (ল্যাবে) পাঠানো হয়। শনিবার প্রতিবেদনে ওই বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সসহ ১১ জনের করোনা পজিটিভ হয়। এ কারণে পুরো অর্থোপেডিক বিভাগ শনিবার সন্ধ্যা থেকে লকডাউন করা হয়েছে। স্বল্প পরিসরে অর্থোপেডিক বিভাগ চালু রাখতে মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তথ্য গোপন করে ভর্তি হওয়া দুই রোগীকে করোনা ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে।’
Leave a Reply